দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আলপনা ও দেওয়ালচিত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে গবেষণা চালিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক ড. আবদুস সোবাহান ও তার গবেষক দল। বিগত দুই বছর ধরে রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় ‘রাজশাহী বিভাগের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের আলপনা ও দেওয়ালচিত্র : বিষয় ও আঙ্গিক’ শীর্ষক এই গবেষণা কর্ম পরিচালনা করেন তারা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুদানে পরিচালিত এই গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ওই অধ্যাপক। এছাড়া প্রকল্পে সহযোগী গবেষক ছিলেন আসাদুল্লা সরকার ও সহকারী গবেষক ছিলেন চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষার্থী লাবু হক।
গবেষণার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে আলপনা ও দেওয়ালচিত্র অঙ্কনের শিল্পটি গুটি কয়েক নৃগোষ্ঠী পরিবার ধরে রাখলেও অঙ্কনশৈলীতে এসেছে নানা পরিবর্তন। প্রাকৃতিক রং থেকে দূরে সরে তারা ব্যবহার করছেন বাজারের কেনা রং। অনেকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় চিত্রপটে আর ফুটিয়ে তুলছেন না নিজেদের সংস্কৃতিকে। দ্রুত নগরায়ণের ফলে দেশের এ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইতোমধ্যে বিলুপ্তির পথে।
গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান বলেন, কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণ করে তাদের আলপনা ও দেওয়ালচিত্রগুলো দেখেছি এবং সেগুলো সম্পর্কে জেনেছি। এলাকাভেদে এগুলোর কর্ম পরিধি এবং কর্মকৌশলে অনেকটাই বৈচিত্র্য আছে। রাজশাহী অঞ্চলের নৃগোষ্ঠীরা মাটির দেওয়ালে আতপ চালের গুঁড়োতে পানি মিশিয়ে আলপনা করে। সেখানে ফুল, লতাপাতা এবং এক রঙের বৈচিত্র্যটা বেশি ছিল, তবে দু-এক জায়গায় অন্যান্য রংও ছিল। নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলেও ফুল, লতাপাতা বেশি ছিল। এছাড়া এসব এলাকার নৃগোষ্ঠী মাটি কেটে উঁচু অংশ রং করে আলপনার ফুলের কলিতে কাচের টুকরো বসিয়ে দেয়, যেটাতে আলাদা এক নান্দনিকতা প্রকাশ পায়।
তিনি বলেন, দেওয়ালচিত্রের মধ্যে নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারাগুলোই তারা চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে তাদের বিভিন্ন উৎসব যেমন কারাম, সোহরাই, পৌষ সংক্রান্তি, নবান্ন, ভাই ফোঁটা দেওয়ার দৃশ্য এবং এসব উৎসবে মাদল, বাঁশিসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহকারে নৃত্য পরিবেশনের দৃশ্য আমরা তাদের চিত্রকর্মে দেখতে পেয়েছি।
তবে জীবন-জীবিকার তাগিদে এই ঐতিহ্য অনেকটাই বিলুপ্তির পথে জানিয়ে এই গবেষক বলেন, আমরা মূলত নৃগোষ্ঠী শিল্পীদের উৎসাহ প্রদানেই এই গবেষণার বিষয়টি বেছে নিয়েছিলাম এবং এই গবেষণার ফলে তারা অনেকটাই উৎসাহিত হয়েছেন। আশা করি, তারা নিজেদের অঙ্কিত আলপনা ও দেওয়ালচিত্রের মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে, যেটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত শিল্পীদের মাঝেও উদ্দীপনার সৃষ্টি করবে।
দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত সংবাদ। প্রকাশ ২১ এপ্রিল, ২০২৪।